Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

গ্রাম্য আদালত

গ্রাম্য আদালত কার্যকর

স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও তৃণমূল পর্যায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সকল শ্রেণীর মানুষকে এ ব্যাপারে সচেতন করে হয়রানি আর আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দেশে প্রথম বারের মতো গ্রাম আদালত কার্যকর করে তোলতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ গতকাল এই এ কার্যক্রম চট্টগ্রাম থেকেই শুরু করেছে।
স্থায়ী সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের  ২০০৬ সালে গ্রাম আদালত আইন পাস করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়্যারম্যান এবং একজন মেম্বারসহ মোট পাঁচজন সদস্য নিয়ে এই আদালত গঠিত হবে। গ্রাম আদালত বিভিন্ন দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ নিস্পত্তি করতে পারবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এই আদালতের চেয়ারম্যান থাকবে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে গ্রাম আদালত থাকবে। অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে স্থানীয়ভাবে ছোট ছোট বিরোধ নিষ্পত্তিই গ্রাম আদালতের মূল লক্ষ্য। নির্ধারিত ফিসহ আবেদনকারীর স্বাক্ষরিত আবেদনপত্র জমার পর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবেদনপত্র যাচাই বাছাই করবেন। আবেদনপত্রটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ঠিকভাবে উল্লেখ আছে কিনা, আবেদনটি সংশ্লিষ্ট গ্রাম আদালতের এখতিয়ার এবং আনুষঙ্গিক সার্বিক বিষয় চেয়ারম্যানকে নিশ্চিত হতে হবে। এই আদালতে বাদি ও বিবাদি শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে আবেদনকারী ও প্রতিবাদী শব্দ দু’টি। উভয় পক্ষের বক্তব্য ও স্বাক্ষ্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে গ্রাম আদালত শুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। গ্রাম আদালত আইনে আরো উল্লেখ রয়েছে, যদি কোন কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বিরোধী কোন পক্ষ নিরপেক্ষ বলে মনে না হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গ্রাম আদালতের জন্য মনোনীত সদস্য ছাড়া অন্য কোন সদস্যকে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতে পারবে। তবে এই আদালতে কোন আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে না। গ্রাম আদালতের বিচারকার্যের ক্ষেত্রে অনিবার্যকারণে সরকারি কর্মচারী অথবা পর্দানশীল বা বৃদ্ধ মহিলা কিংবা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রতিনিধি মনোনীত করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতির লাগবে। মামলার শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে ইচ্ছাকৃতভাবে আবেদনকারী বা প্রতিবাদী হাজির না থাকলে আদালত তা নাকচ করে দিতে পারবে অথবা প্রতিবাদীর অনুপস্থিতিতেই মামলাটি শুনানি বা নিস্পত্তি করতে পারবে। নাকচকরণ বা একতরফা শুনানির    সিদ্ধান্ত গ্রহণের দশ দিনের মধ্যে আবেদনকারী বা প্রতিবাদী আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং অনুপস্থিতির যৌক্তিকতা তুলে ধরে মামলাটি পুনর্বহাল করে পুনরায় শুনানি করা যাবে। পাওনা বা ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য গ্রাম আদালতের আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উক্ত অর্থ প্রদান করা না হলে ইউনিয়ন পরিষদের বকেয়া কর আদায়ের পদ্ধতিতে তা আদায় করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে প্রদান করতে পারবে। কোন ব্যক্তি জারিকৃত সমন ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করলে উক্ত ব্যক্তি তার বক্তব্য পেশ করার সুযোগ প্রদান সাপেক্ষে পাঁচশ’ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা পরিশোধ করা না হলে গ্রাম আদালত উক্ত জরিমানা আদায়ের জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অনুরোধ করা যাবে। এলজিডি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম মোজাম্মেল হক বলেন, অল্প সময়ে এবং স্বল্প খরচে গ্রাম আদালতে সঠিক বিচার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাড়ির কাছে হওয়ায় গ্রাম আদালতে সহজেই যাওয়া যায়। উভয়পক্ষের মনোনীত ব্যক্তির সমন্বয়ে বিচারকার্য সম্পন্ন হয় বলে গ্রাম আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব। গ্রাম আদালতে সমস্যা নিষ্পন্ন হলে উভয়ের মধ্যে পূর্বের ভ্রাতৃত্ববোধ ফিরে আনা যায়। গ্রামের বিচার গ্রামেই নিষ্পত্তি হলে এলাকার অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকে। তা ছাড়া গ্রাম আদালতের কারণে উপজেলা জজ ও জেলা জজসহ বিভিন্ন আদালতে মামলাজট কমিয়ে আনবে। পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী মানুষের হয়রানি কমবে। ২০০৬ সালে এ আইন চালু হলেও তা পরিপূর্ণ প্রয়োগ করা হয়নি। বর্তমান সরকার এই ধারা শুরু করে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনে জনমত গঠন করে এই আইনের কোন কোন ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা যেতে পারে। ফেজদারী মামলার ক্ষেত্রে চিফ জুডিশিয়াল অথবা চিফ ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর পিটিশনের ব্যবস্থা রাখা। দেওয়ানী মামলার ক্ষেত্রে যুগ্ম জেলা জজ বরাবর পিটিশন করা। গ্রাম আদালতকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের দেওয়ানীূ ও ফৌজদারি বিরোধ করতে পারবে। এলাকার গুরুত্ব ও সার্বিক পরিস্থিতি যাচাই করে মূল্যমান বাড়ানোর সুযোগ রাখা দরকার। গ্রাম আদালতে বিচারের পাশাপাশি সাজার ব্যবস্থা রাখা।